কাজী নজরুল ইসলাম যে গতিতে একটা নতুন গান লিখে শেষ করতেন, সেটা না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না, এ কথা লিখে গেছেন তাঁর অন্তরের বন্ধু কাজী মোতাহার হোসেন। লেখার টেবিলে বসে কিংবা বিছানায় আধশোয়া হয়ে তিনি গান লিখেছেন, ব্যাপারটা সে রকম ছিল না। কোনো একটি গান লিখতে তাঁর সময় লেগেছে মাত্র পাঁচ মিনিট আবার কোনোটি শেষ করেছেন আধ ঘণ্টায়।
সংশ্লিষ্ট বইপত্র পড়ে জানা গেল, নজরুল হারমোনিয়াম বাজিয়ে প্রথমে বিষয় ছাড়াই একটি রাগের সম্পূর্ণ কাঠামো তৈরি করে নিতেন। তারপর যে যে শব্দ ওই সুরের সঙ্গে স্বতঃস্ফূর্তভাবে খাপ খায়, তেমনি বাছাই করা উত্তম সুরের সাহায্যে গানটি রচনা করতেন তিনি।
‘স্মৃতিকথা’ নামের বইয়ে মোতাহার হোসেন এ বিষয়ে আরও লিখেছেন, নজরুল হারমোনিয়াম বাজাতে বাজাতে গানটি গাইতে থাকতেন আর গ্রামোফোন কোম্পানির স্ক্রিপ্ট লেখকেরা সেটা দ্রুতগতিতে লিখে নিতেন অথবা কবি নিজেই গাইতেন ও লিখতেন। এভাবে মিনিট পাঁচেকের মধ্যে একটি রাগের কাঠামোর প্রতিটি অঙ্গের আকার অনুযায়ী সুন্দর সুন্দর পঙ্ক্তিগুলো রুপান্তরিত হয়ে উঠত একটি সম্পূর্ণ গানের শরীরে।
নজরুল ইসলাম সিনেমা ও থিয়েটারজগতে প্রবেশ করেন ১৯৩১ সালের দিকে। ওই সময় ঠুমরি–সম্রাট ওস্তাদ জমিরউদ্দিন খান সাহেবের মৃত্যু হলে গ্রামোফোন কোম্পানি নজরুলকে হেড কম্পোজার ও সংগীতশিল্পীদের ট্রেনার হিসেবে নিযুক্ত করে।
নজরুল রচিত গানের সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। অধিকাংশ গানে নিজেই সুরারোপ করেছিলেন। গজল, রাগপ্রধান, কাব্যগীতি, উদ্দীপক গান, শ্যামা সংগীত, ইসলামিসহ বহু বিচিত্র ধরনের গান তিনি রচনা করেছেন।
মন্তব্য করুন