পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের পরিপত্র অমান্য করে সরকারি সময়সূচি সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৪ টার পরিবর্তে দুপুর ১ টা পর্যন্ত অর্ধ স্কুল পরিচালনা করার অভিযোগ উঠেছে নৃপেন্দ্র নারায়ণ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
জানা যায়, টিফিনের পর প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিতি নিশ্চিত করতে গত ১ অক্টোবর দেবীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত এক পরিপত্র জারি করা হয়। পরিপত্রে বলা হয়, টিফিনের পর উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা স্কুল ত্যাগ করে বাসায় না গিয়ে যত্র-তত্র অবস্থান করছেন এবং বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় এবং ক্ষতিকর কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়।
পরিপত্রে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধরে রাখতে চারটি নির্দেশনা দেয়া হয়। যেখানে প্রথম নির্দেশনায় বলা হয়, সরকারের নির্ধারিত সময়সূচি সকাল ১০ টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা এবং রুটিন অনুযায়ী ক্লাস পরিচালনা করা। আরেক নির্দেশনায় বলা হয় টিফিনের পর হাজিরা খাতায় পুনরায় উপস্থিতি নিশ্চিত করা। যদি কোন শিক্ষার্থী বার বার অনুপস্থিত থাকে তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্ৰহন করা।
এদিকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের এই নির্দেশনা অমান্য করে নিয়মিত স্কুলে অর্ধ ক্লাস পরিচালনা করছেন নৃপেন্দ্র নারায়ণ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ নূরুল ইসলাম।
রবিবার ( ৮ অক্টোবর) সরজমিনে স্কুলে গিয়ে দেখতে পাওয়া যায় দুপুর ১২ টায় বেশ কিছু শিক্ষার্থী বাসায় চলে যাচ্ছে, কেউ কেউ রাস্তায় ঘুরাঘুরি করছে। এছাড়া দুপুর ১ টার সময় ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণির সকল শিক্ষার্থী বাসায় চলে যাচ্ছে। বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলা হলে তারা জানায় নিয়মিত টিফিনের সময় ছুটি দিয়ে দেয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানায়, “অক্টোবরের শুরু থেকেই টিফিনের সময় ছুটি দেয়া হয়। আমাদের টিফিনও দেয়া হয় না। তাই বাসায় চলে যাচ্ছি। ”
অষ্টম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী জানায়, “আমাদের বলা হয়েছে টেস্ট পরীক্ষা তাই টিফিনের পর ক্লাস নেয়া হচ্ছে না। তাই আমরা প্রতিদিন ১ টায় বাসায় চলে যাই।”
এদিকে আগামী নভেম্বর মাস থেকে সারাদেশে সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এক সাথে বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এর মাঝে শারদীয় দুর্গাপূজার বন্ধ রয়েছে। পরীক্ষার আগের মাসে পূর্ণ ক্লাস না নেয়ায় শিক্ষার্থীরা পড়ালেখায় পিছিয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
রিয়াজুল হক নামে এক অভিভাবক বলেন, “প্রায় দিনই আমার ছেলে দুপুরে স্কুল থেকে চলে আসে। জিজ্ঞেস করলে বলে স্কুল ছুটি দিয়ে দিছে। দুপুরে আর বাসায় পড়ালেখা করে না। এদিকে বেসরকারি স্কুলে ঠিকই ৪ টা পর্যন্ত ক্লাস চলছে।”
ধনেশ রায় নামে আরেক অভিভাবক বলেন, “স্কুলে এখন ঠিকমতো ক্লাস হয় না। বেতন দিয়ে অতিথি শিক্ষক রাখা হয়েছে যাতে নিয়মিত ক্লাস নেয়া হয় কিন্তু বেশিরভাগ সময় টিফিনের পর ক্লাস নেয় না। এছাড়া শিক্ষার্থীদের শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করা হয়।”
এদিকে দেবীগঞ্জ পৌরসভার বেশ কয়েকটি স্কুলে সরজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় বোর্ডের নির্দেশনা মেনে সকল স্কুলে এসএসসি টেস্ট পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। এছাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের পরিপত্র মেনে পরীক্ষার পাশাপাশি ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের যথারীতি ১০ টা থেকে ৪ অব্দি রুটিন অনুযায়ী ক্লাসও নেয়া হচ্ছে।
এবিষয়ে প্রধান শিক্ষক মোঃ নূরুল ইসলামের সাথে কথা বলে হলে তিনি জানান, “আমি কোন পরিপত্র অমান্য করি নাই। আমার বিদ্যালয়ে সরকারি এবং অতিথি শিক্ষক মিলিয়ে রয়েছেন ১২ জন। এসএসসি পরীক্ষা পরিচালনা করার কারনে টিফিনের পর ক্লাস নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।”
এর আগেও অত্র বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট ছিলো, তখন পরীক্ষার সময় ক্লাস নেয়া সম্ভব হলেও এখন কেন নেয়া সম্ভব হচ্ছে না এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
পরিপত্র অমান্য করে অর্ধ স্কুল পরিচালনা করার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ সলিমুল্লাহ বলেন, “নিয়মিত টিফিনের পর স্কুলে ক্লাস হচ্ছে না এমন অভিযোগ পেলে কিংবা আমাদের নজরে আসলে আমারা তদন্ত করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করবো।”
সরকারি পরিপত্র অমান্য করে ১০ টা থেকে ৪টার পরিবর্তে ১ টা পর্যন্ত স্কুল পরিচালনা করায় অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কী না এই বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শরিফুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয় নি।
এস.এম/ডিএস
মন্তব্য করুন