পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে নৃপেন্দ্র নারায়ণ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককের বিরুদ্ধে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের অর্থের বিনিময়ে প্রশংসাপত্র দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা প্রশংসাপত্র ছাড়া উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে না। এই সুযোগে তাদেরকে জিম্মি করে বাড়তি টাকা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে একাধিক শিক্ষার্থীরা। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রশংসাপত্র তুলতে জনপ্রতি ১৫০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। টাকা না দিলে প্রশংসাপত্র দিচ্ছে না বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, “আমার বাবা একজন কৃষক। এই স্কুল থেকে এবছর মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পাস করেছি। প্রশংসাপত্র তুলতে গেলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৫০ টাকা দাবি করে। কিন্তু আমার কাছে টাকা কম থাকায় ফেরত আসতে হয়।”
দেবীগঞ্জ পৌরসভার আরেক শিক্ষার্থী জানায়, “কিছুদিন আগে প্রশংসাপত্র তুলতে স্কুলে গিয়েছিলাম। প্রশংসাপত্র বিতরণের দায়িত্বে থাকা স্যার বললেন ১৫০ টাকা লাগবে। জিজ্ঞেস করি কিসের জন্য। তিনি বলেন টাকা দিলে প্রশংসাপত্র পাবে না দিলে পাবে না। তিনি আরো বলেন একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট নিতেও টাকা দিতে হবে।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী জানায়, “আমাদের পাশ্ববর্তী অলদীনি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রশংসাপত্রের জন্য কোনরকম টাকা নেয়া হয় নি। অথচ আমাদের স্কুলে সবার কাছেই টাকা নেয়া হয়েছে। কলেজে ভর্তির জন্য প্রয়োজন তাই বাধ্য হয়েই টাকা দিয়ে প্রশংসাপত্র নিতে হয়েছে।”
এদিকে শিক্ষার্থীদের কাছে টাকার বিনিময়ে প্রশংসাপত্র দেয়ায় বেশ কিছু শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাদের মধ্যে একজন লিখেন, “স্কুলে প্রশংসাপত্র তুলতে গিয়ে জানতে পারি আমার চরিত্রের মূল্য ১৫০ টাকা।”
হৃদয় হাসান নামে একজন অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “সরকারি স্কুলে খরচ কম জন্য ভর্তি করেছিলাম। এখন দেখতেছি পাশ করার পরও নানা অজুহাতে টাকা নেয়া হচ্ছে।”
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নূরুল ইসলাম বলেন, “এই টাকাটা নেয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেয়ার জন্য। তাদের নামে ক্রেস তৈরি করে তাদের দেয়া হবে। এছাড়া দরিদ্র শিক্ষার্থীদের কাছে টাকা নিতে নিষেধ করেছি।”
অন্যদিকে ২০২১ এবং ২০২২ শিক্ষাবর্ষে বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায় তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকেই প্রশংসাপত্র নেয়ার সময় টাকা নেয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের কোন সংবর্ধনা দেয়া হয় নি।
এছাড়া প্রাক্তন বেশ কিছু শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলে, ” আমরা স্কুল থেকে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে এসেছি। আমরা তো স্যারদের কাছে সংবর্ধনা চাই নি। যদি স্কুলের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা যদি দিতে হয় তবে স্কুলের টাকায় দিবে, আমাদের কাছ থেকে কেন টাকা নেয়া হলো।”
এবিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ সলিমুল্লাহ বলেন, “প্রশংসাপত্রের জন্য কোন ধরনের অর্থ আদায়ের নিয়ম নেই। এছাড়া সার্টিফিকেট এবং একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্টের টাকা ফরম ফিলাপ এর সময় নেয়া হয়। তাই এই বাবদ নতুন করে টাকা নেয়ার কোন সুযোগ নেই। যদি সত্যতা মিলে তাহলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এবিষয়ে অবগত করবো।”
এস.এম/ডিএস
মন্তব্য করুন