১৯ মে (রবিবার) পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের জোলফা এলাকার কাছে বিরুপ আবহাওয়ার কবলে পড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পরপরই উদ্ধারকাজ শুরু করে প্রায় অর্ধশতাধিক উদ্ধারকারী দল। কিন্তু পাহাড়ী অঞ্চলটিতে ঘন কুয়াশা এবং ভারী বৃষ্টির কারনে উদ্ধারকাজ কঠিন হয়ে পড়ে।
দুর্ঘটনার ১৬ ঘন্টা পর প্রেসিডেন্ট রাইসিকে বহনকারী বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটির সন্ধান পায় উদ্ধারকারী দল। কিন্তু সেখানে প্রাণের কোনো চিহ্ন ছিল না। এই দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট রাইসির সাথে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির আব্দুল্লাহিয়ান, ইরানের ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির প্রতিনিধি ও তাবরিজের ইমাম সৈয়েদ মোহাম্মদ আল হাশেম, পূর্ব আজারবাইজানের গভর্নর মালিক রাহমাতি, হেলিকপ্টারটির পাইলট, কো-পাইলট, প্রেসিডেন্ট এর নিরাপত্তা প্রধান এবং বডিগার্ড সহ সকলেই প্রাণ হারিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যুতে শুধু ইরান নয়, ইরাক, সিরিয়া, লেবানন সহ পুরো মুসলিম বিশ্বে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সহ বিশ্ব নেতারা ইব্রাহিম রাইসির এই অনাকাঙ্খিত মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।
প্রেসিডেন্ট রাইসি যেভাবে পশ্চিমাদের বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা এবং ইসরায়েলের হুমকির মুখে ইরানের প্রতিরক্ষা, অর্থনীতি মজবুতকরণ সহ ইরানকে সফল ভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন ঠিক তেমনি ভাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল্লাহিয়ানও দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বহির্বিশ্বে ইরানের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি, চীন-রাশিয়ার মতো শক্তিশালী দেশের সাথে সম্পর্ক মজবুত করণ সহ নানামুখী পদক্ষেপের মাধ্যমে ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি গড়ে তুলেছেন।
এছাড়া দখলদার ইসরায়েল এবং পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কৌশলী পদক্ষেপ গ্রহণের কারনে ইসরায়েল এবং তাদের মিত্র আমেরিকার জন্য একপ্রকার গলার কাটায় পরিণত হয়ে উঠেছিলেন এই দুই নেতা। রাইসির আমলেই ইরান প্রথমবারের মতো সরাসরি ইসরাইলি ভূমিতে আঘাত হানে। যেটা সকলের জন্য ছিল কল্পনাতীত এবং ইসরায়েল ও পশ্চিমাদের জন্য ছিল একটি বড় ধাক্কা।
হুথি, হামাস, হিজবুল্লাহর মতো আঞ্চলিক প্রক্সি গ্রুপগুলোর মাধ্যমে ইসরায়েল ও আমেরিকাকে চাপে রাখার পেছনেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল এই দুই নেতার।
তাই নি:সন্দেহে বলা যায়, প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল্লাহিয়ানের এই অনাকাঙ্খিত মৃত্যু ইরান সহ মধ্যপ্রাচ্যের শান্তিকামী মুসলিমদেশ সমূহ এবং পুরো মুসলিম বিশ্বের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।
সেজন্যই হয়তো প্রিয় নেতাকে শেষ বিদায় জানানোর জন্য ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে দুহাত তুলে প্রার্থনা করছে ইরানের সাধারণ জনগণ।
আর.ডিএস
মন্তব্য করুন