পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে প্রশাসনের অবহেলায় কোন কাজে আসছে না মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতি জাগরুক করে রাখতে ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত দেবীগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ। নির্মাণ কাজ শেষের পর থেকে স্বাধীনতা দিবস কিংবা বিজয় দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয় না মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভে। অবহেলা আর অযত্নে ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভটি।
শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রশাসনের নিয়মিত নজরদারি না থাকায় রাতের আঁধারে দেবীগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ হয়ে উঠে মাদকসেবীদের অভয়াশ্রম। এছাড়া দিনের বেলায় সেখানে কাপড় শুকাতে দেওয়া হয়। স্মৃতিস্তম্ভের চারদিকে ফেলা হয় বাসা বাড়ির ময়লা আবর্জনা। দূর থেকে দেখলে মনে হয় দেবীগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ ময়লার ভাগাড়ে দাঁড়িয়ে আছে। এছাড়া নির্মাণের পর থেকে ব্যবহার না করায় ইতিমধ্যে নষ্ট হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভের পাশে নির্মাণ করা টয়লেট সহ অন্যান্য জিনিসপত্র।
এদিকে, দেবীগঞ্জের যে স্থানটিতে মুক্তিযুদ্ধের কোন স্মৃতি নেই সেই স্থানে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মুক্তিযোদ্ধারা। এছাড়া প্রশাসনের অবহেলায় এটি ময়লার ভাগাড় হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়।
এবিষয়ে যুদ্ধকালীন কম্পানি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা এ.কে ভুঁইয়া বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভটি এখানে কিভাবে এবং কার পরামর্শে করা হলো আমি জানি না। এখন যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ করা হয়েছে সেহেতু এটির যথাযথ মর্যাদা দেয়া উচিত। স্মৃতিস্তম্ভে কাপড় শুকানো হচ্ছে, পাশেই ময়লা আবর্জনার ফেলা হচ্ছে। এতে করে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ক্ষুন্ন হচ্ছে।”
জাতীয় বিভিন্ন দিবস সমূহ বিশেষত, স্বাধীনতা দিবস এবং বিজয় দিবসেও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা হয় না দেবীগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ, দেওয়া হয় না কোন ধরনের শ্রদ্ধাঞ্জলি। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ থাকতেও বিজয় চত্বরের মঞ্চে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা নিয়েও শুরু হয়েছে সমালোচনা।
এবিষয়ে দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শরীফুল আলম বলেন, “এটি কোন প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হয়েছে, সেটি খোঁজ খবর নিয়ে দেখতে হবে। স্মৃতিস্তম্ভে কারা ময়লা আবর্জনা ফেলতেছে আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি এবং দ্রুত যথাযথভাবে এটি রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এলাকাবাসী ও মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি মুক্তিযুদ্ধের এই স্মৃতিস্তম্ভটির দ্রুত সংস্কার ও রক্ষনাবেক্ষন করে প্রতি বছর বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হোক।
উল্লেখ্য, মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ বিসর্জন দেওয়া শহীদদের স্মৃতি চির জাগরুক রাখতে ২০১৯ সালে সারাদেশের ন্যায় পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ পৌরসভার বাবু পাড়া সংলগ্ন সরকারি খাস জমিতে প্রায় ২৭ লাখ টাকা ব্যায়ে নির্মাণ করা হয় দেবীগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ।
এস.এম/ডিএস
মন্তব্য করুন