পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে মৃদু শৈত্য প্রবাহের কারনে গত এক সপ্তাহে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। শীতের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা, যার অধিকাংশই শিশু।
রবিবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে সরজমিনে দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা যায়, নিউমোনিয়ায়, ডায়রিয়া সহ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া শিশুদের পাশপাশি এজমা ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত প্রাপ্ত বয়স্ক রোগীরাও ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ৭ দিনে ৩০ জন শিশু ডায়েরিয়া এবং ৬ জন শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এছাড়া, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১৩ জন এবং এজমা ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত ৬ জন প্রাপ্ত বয়স্ক রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
বহির্বিভাগে সেবা দেয়া চিকিৎসকরা জানান, প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জন শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসছেন। এর মধ্যে শতকরা ৩০ ভাগ ডায়েরিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। অন্যদিকে, চিকিৎসা নিতে আসা প্রাপ্ত বয়স্কদের মাঝে প্রায় শতকরা ৫০ ভাগ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত। যেসব শিশু ও প্রাপ্ত বয়স্ক রোগীদের অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ তাদের ভর্তি করা হচ্ছে হাসপতালে, বাকিরা চিকিৎসা নিয়ে ফিরে যাচ্ছে বাড়িতে।
দেবীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের দেবীডুবা গ্ৰামের হুমায়ারা নামে ১৩ মাস বয়সী শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত, ভর্তি করা হয়েছে মহিলা ওয়ার্ডে। হুমায়ারার মা আসমা বেগম বলেন, “বাচ্চাটা কয়েকদিন ধরে পাতলা পায়খানা আর বমি করতেছিলো। ডাক্তার দেখানোর পর ৪ দিন হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা করলাম। এখন কিছুটা সুস্থ আছে, আজকে বাসায় নিয়ে যাব।”
একই সমস্যা নিয়ে ৭ মাস বয়সী ছেলে সন্তানকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে আসেন দেবীগঞ্জ কৃষি ফার্ম সংলগ্ন এলাকার মল্লিকা নামে এক গৃহবধূ। তিনি বলেন, “গত ৩ দিন থেকে পাতলা পায়খানা ও বমি করছিলো শিশুটি। ওষুধ খাইয়েও কাজ না হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করলাম। ডাক্তার দেখেছেন, এখন হয়তো স্যালাইন দিবেন।”
অন্যদিকে শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে গত ১৫ দিন ধরে হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন দেবীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ডাঙ্গা পাড়া এলাকার আব্দুল গফুর নামের ৬৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ। তার স্ত্রী জানায়, “দীর্ঘদিন ধরে এজমার সমস্যায় ভুগছেন তিনি। শীত বাড়ায় শ্বাসকষ্টের সমস্যা বাড়তে থাকে, তাই হাসপাতালে ভর্তি করে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে।”
দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ হাসিনুর রহমান বলেন, “শীতের তীব্রতা বাড়ায় শিশুদের মধ্যে জ্বর, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। রোটা ভাইরাসের কারণে মূলত ডায়রিয়া হয়।ভাইরাসজনিত হওয়ায় সময়মতো চিকিৎসা করলে ৫/৭ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যাবে শিশু। ইতিমধ্যে বেশ কিছু শিশু হাসপাতালে ভর্তি আছে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওষুধ ও স্যালাইন মজুদ রয়েছে। আমাদের চিকিৎসক ও নার্সরা আন্তরিকতার সাথে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।”
শীতের তীব্রতা বাড়তে থাকলে ঠাণ্ডাজনিত সমস্যাও বাড়বে। এক্ষেত্রে শিশুদের দিকে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে অভিভাবকদের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
এস.এম/ডিএস
মন্তব্য করুন