তবে এবছর প্রতিমা ভাসানোর আগেই করতোয়ার স্রোতে ভেসে গেছে ৭১ জন সনাতনীর দেহ। একে একে ৬৮টি মরদেহ উদ্ধার হলেও এখনো সন্ধান মেলেনি ৩ ভক্তের। ফলে দুর্গোৎসবের আনন্দ ম্লান হয়েছে পঞ্চগড়ের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের।
গত রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাট এলাকায় করতোয়া নদীতে শতাধিক যাত্রীসহ নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। সে সময় অনেকে সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও বিশেষ করে নারী ও শিশুরা পানিতে ডুবে যায়। পরে উদ্ধার অভিযান শুরু করে স্থানীয়রাসহ প্রশাসন। এখন পর্যন্ত ৬৯ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। এরমধ্যে ৬৮ জনই সনাতন ধর্মের। কেবলমাত্র মাঝি হাশেম আলীই ছিলেন ইসলাম ধর্মাবলম্বী। এছাড়া আরো তিনজন সনাতনী এখনো নিঁখোজ।
নৌকাডুবির ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মাঝে সরকারি সহায়তা প্রদান
বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের করতোয়া নদীর অপরপাড়ে বোদেশ্বরী পীঠ মন্দিরে মহালয়া পূজা উপলক্ষে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ধর্মসভার আয়োজন করা হয়। দেবী দুর্গার আরাধনা করার জন্য সনাতনীরা নদী পেরিয়ে মূলত ওই মন্দিরেই যাচ্ছিলেন। সবার ইচ্ছে ছিলো বোধন থেকে বিসর্জন পর্যন্ত দুর্গার পূজা করে আনন্দের সঙ্গে বড় এই ধর্মীয় উৎসব পালন করার। কিন্তু সব আনন্দই যেন তলিয়ে গেলো করতোয়ায়। এখন বাড়ি বাড়ি শুধুই আহাজারি। হৃদয়বিদারক এই ঘটনার রেশ থেকে যাবে এবার দুর্গাপূজায়ও।
স্বজনহারা পরিবারের গোবিন্দ্র চন্দ্র বর্মন বলেন, দেবী মায়ের কী ইচ্ছে জানি না। তার ভাসানের আগেই আমাদের ৬৮ জন ভক্তের ভাসান হয়ে গেল। এবার দুর্গাপূজা কিভাবে করব আমরা ভেবে পাচ্ছি না। বিধাতার লিলা বোঝা বড় মুশকিল। তবে নির্মম হলেও নিয়তি মেনে নিতে হয়।
স্বজনহারা ব্যক্তিদের মধ্যে এমন দুই ভাই রয়েছে যারা নৌকাডুবিতে তাদের বাবা-মা সহ পরিবারের ছয় সদস্যকেই হারিয়েছে। তাই স্বজনহারাদের জীবনে এবারের দুর্গা পূজা শুধু আনন্দের না বরং প্রিয়জন হারানোর স্মৃতিও বহন করবে। আর স্বজনহারাদের হৃদয়ে এই ক্ষত থেকে যাবে বহুদিন।
জানা গেছে, উদ্ধার হওয়া মৃত ৬৯ জনের মধ্যে নারী রয়েছে ৩০ জন, শিশু ২১ জন ও পুরুষ ১৮ জন। এর মধ্যে দেবীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা ১৮ জন, বোদা উপজেলার ৪৫ জন, আটোয়ারীর দুজন, ঠাকুরগাঁও সদরের তিনজন ও পঞ্চগড় সদরের একজন।
এদিকে, নৌকাডুবির ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর রায়কে প্রধান করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন। আগামী রোববার কমিটি প্রতিবেদন জমা দিবে বলে জানা গেছে।