১৯৮৪ সালে বৃহত্তর দিনাজপুর জেলাকে বিভক্ত করে নতুন তিন জেলা করা হলে পাঁচ উপজেলা নিয়ে গঠিত হয় পঞ্চগড় জেলা। একই সময় দেবীগঞ্জ ও বোদা উপজেলা নিয়ে গঠিত হয় পঞ্চগড়- ২ সংসদীয় আসন। ১৯৮৬ সাল থেকে এপর্যন্ত এ আসনটিতে ৮ টি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগ ৩ বার, বিএনপি ২ বার, সিপিবি ২ বার ও জাতীয় পার্টি ১ বার নিজেদের দখলে রাখতে পারে জাতীয় সংসদের এই আসনটি।
দেবীগঞ্জ ও বোদা উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, পঞ্চগড় ২ আসনে বর্তমানে মোট ভোটার সংখ্যা চার লাখ ৪ হাজার ৭২৬ জন। পুরুষ ভোটার দুই লাখ ৫ হাজার ৫৬৪ জন এবং নারী ভোটার এক লাখ ৯৯ হাজার ১৬০ জন। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ২ জন ভোটার রয়েছেন।
নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, নতুন ভোটার সংখ্যা ৬৯ হাজার ৮৫০ জন। নতুন ভোটারদের মধ্যে ৯০ ভাগ তরুণ-তরুণী। যারা এর আগে ভোট তুলতে পারেন নি অথবা নিজ এলাকার বাহিরে অবস্থান করেছেন এমন ভোটার বাকী ১০ ভাগ।
এদিকে, ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১ লাখ ৪২ হাজার ৪৮৮ টি ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নূরুল ইসলাম সুজন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মনোনীত মোজাহার হোসেন পান ৯১ হাজার ৭০০ ভোট। ভোটের ব্যবধান ৫০ হাজার ৭৮৮ টি।
অন্যদিকে, ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় এ আসনটিতে এক লাখ ৭ হাজার ৩৬০ ভোট পেয়ে জয় লাভ করেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নূরুল ইসলাম সুজন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাসদ মনোনীত এমরান আল আমিন ৭ হাজার ২৯২ ভোট পান। ভোটের ব্যবধান এক লাখ ৬৮ টি ।
সর্বশেষ অনুষ্ঠিত হওয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নুরুল ইসলাম সুজন নৌকা প্রতীক নিয়ে এক লাখ ৬৯ হাজার ৫৯৪ টি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ফরহাদ হোসেন আজাদ ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে এক লাখ ১১ হাজার ২৯৫ ভোট পান। ভোটের ব্যবধান ছিলো ৫৮ হাজার ২৯৯ টি।
এদিকে নতুন ভোটাররা বলছেন, শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থান, মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে উন্নয়ন সহ এলাকার সার্বিক উন্নয়নের দিক বিবেচনায় নিয়ে ভোট দেবেন তারা।
নতুন ভোটারদের একজন দেবীগঞ্জ সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ শিশির মাহমুদ শাকিল। সে দেবীগঞ্জ পৌরসভার কামাত পাড়া এলাকার বাসিন্দা। নতুন ভোটার হিসেবে তার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, “দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রথম ভোটাধিকার প্রয়োগ করবো। প্রথম ভোট তাকেই দিবো যিনি এলাকার উন্নয়ন বলতে শুধু রাস্তা-ঘাট নির্মাণে সীমাবদ্ধ থাকবেন না বরং এর পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোর গুনগত শিক্ষার পরিবেশ উন্নত করতে কাজ করবেন। মাদক নির্মূল ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবেন এমন ব্যক্তিকেই বেছে নিতে চাই ।”
দেবীগঞ্জ উপজেলার আরেক নতুন ভোটার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া নাদিয়া আক্তার জানায়, “আমাদের প্রত্যাশা এলাকার সার্বিক উন্নয়ন। চিকিৎসা খাতে উন্নয়ন সহ যেসব খাতে আমার এলাকা পিছিয়ে যেসব দিকে নজর দিবেন এবং সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের বিভিন্ন ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করবে এমন প্রার্থীকেই আমি আমার প্রথম ভোট দিতে চাই।”
পঞ্চগড় ২ আসনের আরেক নতুন ভোটার মশিউর রহমান শাওন বলেন, “বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমার খুব একটা চিন্তা-ভাবনা নেই৷ তবে ভোট প্রদানের তীব্র আগ্রহ রয়েছে৷ যদি মনে হয় আমার ভোটের মূল্যায়ন হবে তাহলে নিশ্চয়ই ভোট প্রদান করবো৷ আর এই পরিস্থিতি নির্বাচন কমিশন, সরকার কিংবা যারা দায়িত্বে থাকবে তাদেরকেই তৈরি করতে হবে৷”
নতুন ভোটারদের বিষয়ে পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আনোয়ার সাদাত সম্রাট জানান, “পঞ্চগড় জেলার বেকারদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। পঞ্চগড় ২ আসনের দেবীগঞ্জে ইপিজেড নির্মাণ হতে যাচ্ছে। এতে করে অনেক বেকারের কর্মসংস্থান হবে। আশা করছি সরকারের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম নতুন ভোটারদের আকৃষ্ট করবে।”
অন্যদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ বলেন, “পঞ্চগড় ২ আসনে প্রায় ৭০ হাজার নতুন ভোটার হয়েছেন। আমরা তারন্যকে নির্ভর করে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আমরা ৩১ দফা নিয়ে রাষ্ট্র যন্ত্র মেরামতের ডাক দিয়েছি । এই প্রজন্মের যে প্রত্যাশা সেই প্রত্যাশা পূরণে বেকারত্ব দূরীকরণের লক্ষ্যে নানামুখী বাস্তবসম্মত কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। কেননা তাদের প্রতি আমাদের প্রত্যাশা বেশি। মানুষের যে প্রত্যাশা গণতন্ত্র, ভোটের অধিকার সেই প্রত্যাশা গুলো পূরণ করে দেশের জন্য কাজ করবো।”
বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচনের ভোটের ফলাফল থেকে দেখা যায়, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মাঝে ভোটের ব্যবধান গড়ে প্রায় ৬৯ হাজার ৭০০।নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নতুন ভোটাররা জয় পরাজয়ের বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবে।
এস.এম/ডিএস
মন্তব্য করুন