রবিবার ( ৯ অক্টোবর) সকালে দেবীগঞ্জ পৌরসভার প্রাণকেন্দ্র চৌরাস্তা সংলগ্ন পাবলিক ক্লাব মার্কেটের সামনে পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত বকুল ও কাঠ বাদামের গাছের ডাল কেটে দেয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীরা। এতে হাজারো পাখির আবাসস্থল নষ্ট হয়ে গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে সবুজ দেবীগঞ্জ বিনির্মাণের লক্ষে, ঐতিহাসিক দেবীগঞ্জ পাবলিক ক্লাবের পক্ষ থেকে চৌরাস্তা সংলগ্ন পাবলিক ক্লাব মার্কেটের সামনে ৬ টি গাছ রোপন করা হয়। এর মাঝে বকুল ও কাঠ বাদামের গাছ রয়েছে। গাছগুলোতে ধীরে ধীরে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির আনাগোনা বাড়তে শুরু করলে সেখানে মাটির হাঁড়ি স্থাপন করা হয়। সন্ধ্যা নামার পরও পাখপাখালির কূঞ্জনে মুখরিত হতো চৌরাস্তার আশাপাশ । হাজারো পাখি ঝাঁকে ঝাঁকে ভোরে খাদ্য সংগ্রহে বেরিয়ে প্রতিদিন সন্ধ্যায় দল বেধে ফিরে আসতো এই গাছগুলোতে । দেবীগঞ্জ চৌরাস্তার এই গাছগুলো এখন সকলের কাছে পাখি অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত।
[caption id="attachment_9253" align="alignleft" width="380"] গাছের ডালপালা কাটার পূর্বের ছবি..[/caption]
গ্ৰীন দেবীগঞ্জের আহ্বায়ক ও দেবীগঞ্জ পাবলিক ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন চৌধুরী জানান, "আমার এই গাছ গুলো দেবীগঞ্জ পাবলিক ক্লাবের পক্ষ থেকে রোপণ করি সবুজ দেবীগঞ্জ বিনির্মাণের লক্ষে। পরবর্তীতে পাখিদের আনাগোনা বাড়লে আমার গাছগুলোতে হাঁড়ি বসিয়ে দেই যাতে সেখানে পাখিরা থাকতে পারে। এটা এখন পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত হয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এই কর্মকান্ডে হাজারো পাখি তাদের আবাসস্থল হারালো। পাখির অভয়ারণ্য নষ্ট না করে অন্য কোন উপায়েও তো বৈদ্যুতিক লাইন রক্ষনাবেক্ষন করা যেত। আমরা মর্মাহত হয়েছি এই ঘটনায়।"
গত শুক্রবার (৭ অক্টোবর) দেবীগঞ্জে মাইকিং করে জানানো হয় শনিবার ও রবিবার পল্লী বিদ্যুৎ এর বৈদ্যুতিক লাইন রক্ষনাবেক্ষন এর জন্য সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি বন্ধ থাকবে বিদ্যৎ। গতকাল শনিবার বিদ্যুৎ লাইন রক্ষণাবেক্ষণ এর কাজ করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দেবীগঞ্জ জোনাল অফিসের কর্মীরা। রবিবার সকালে চৌরাস্তার মোড়ে এসব গাছের ডাল পালা কেটে ফেলেন পল্লী বিদ্যুৎ এর কর্মীরা। এতে হাজারো পাখির আবাসস্থল নষ্ট হয়ে গেছে।
[caption id="attachment_9254" align="alignleft" width="380"] বকুল গাছের ডাল কাটার পরের ছবি...[/caption]
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দেবীগঞ্জ জোনাল অফিসের সহকারী ব্যবস্থাপক মাসুদ জানান, "চৌরাস্তার ঐ গাছগুলো যে পাখি অভয়ারণ্য ছিল সেটা আমাদের জানা ছিল না। আমার জেনে শুনে তো আর প্রকৃতির ক্ষতি করবো না। আমরা মূলত বৈদ্যুতিক লাইনের আশেপাশের ডালপালা গুলো কেটে দেই যাতে ঝড়বৃষ্টির সময় বিদ্যুৎ লাইনের যেন কোন সমস্যা না হয়।"
এ ঘটনায় দেবীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবু বকর সিদ্দিক (আবু) দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, "দেবীগঞ্জ পৌরসভার অন্যতম পাখির অভয়ারণ্য চৌরাস্তার ঐ গাছগুলোর ডাল কেটে ফেলা হয়েছে এটা আমি জানতাম না। আমি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সাথে কথা বলবো, আগামীতে লাইন মেরামতের সময় যাতে কোন পাখির অভয়ারণ্য নষ্ট না করা হয়। দেবীগঞ্জ পৌরসভা সর্বদাই সবুজ দেবীগঞ্জ তৈরিতে কাজ করছে এবং আগামীতেও কাজ করে যাবে। ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে সেদিকে নজর রাখবো।"
দেবীগঞ্জ পৌরসভার চৌরাস্তায় পছন্দসই পরিবেশসহ আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় অনেক আগে থেকেই এই গাছগুলোতে পাখির আবাসস্থল হিসেবে গড়ে উঠেছিল। পাখিদের এই যাওয়া-আসার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য মুগ্ধ করতো মানুষদের। এ ঘটনায় দেবীগঞ্জের প্রকৃতি প্রেমীদের মাঝে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
ছবি:- মোঃ রাশিনুর রহমান রাশিন, ফটো জার্নালিস্ট, দেবীগঞ্জ সংবাদ।
এস.এম/ডিএস