ঘটনাটি ঘটেছে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায়। সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২৫ এপ্রিল জাতীয় রিক্সা ভ্যান শ্রমিক লীগ দেবীগঞ্জ উপজেলা শাখার আয়োজনে মে দিবস উদযাপন ও সংগঠনের অসহায় সদস্যদের আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের কথা বলে লটারির টিকিট বিক্রি শুরু হয়। লটারি পরিচালনার দায়িত্বে ছিল দৈনিক বধুয়া র্যাফেল ড্র নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
প্রশাসনের কোন অনুমতি না নিয়ে ভ্রাম্যমাণ বাহনে ২০ টাকা মূল্যের লটারির টিকিট বিক্রি শুরু হয় উপজেলার দশ ইউনিয়নে। টিকিট বিক্রি শুধু উপজেলায় সীমাবদ্ধ রাখার কথা ছিল। তবে তা না করে পার্শ্ববর্তী বোদা উপজেলা ও ডোমার উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় লটারির টিকিট বিক্রি করা হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্রি হতো টিকিট।
সোমবার (১লা মে) ডোমার উপজেলার বোড়াগাড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা স্থানীয় সাংবাদিক হরিদাশ রায় মুঠোফোনে জানান, "তার ছোট দুই ছেলে-মেয়ে ১০টি টিকিট কিনেছে। ড্র অনুষ্ঠিত হবে না শুনলে তারা মন খারাপ করবে।"
পার্শ্ববর্তী বোদা উপজেলার সাকোয়া বাজারের ব্যবসায়ী হাসেম আলী জানান, "লটারির কথা শুনে তিনি ৫টি টিকিট কিনেছেন। কিন্তু ড্র এর দিন লটারি বন্ধ করায় তার মতো সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।"
দেবীগঞ্জ উপজেলার লক্ষীরহাট এলাকার জিলানী রহমান জানান, "আমরা সাধারণ ক্রেতারা সব শেষে ক্ষতিগ্রস্ত হলাম। প্রশাসনের উচিত ছিল প্রথমেই লটারি বন্ধ করে দেওয়া। তা না করে ৫ দিন পর প্রশাসন লটারি বন্ধ করায় সাধারণ মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হল। প্রশাসনের সিদ্ধান্থীনতায় বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হল। প্রশাসন কি এখন ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয়টি ভাববেন প্রশ্ন করেন তিনি।"
চিলাহাটি ইউনিয়নের রমিজ উদ্দিন ও শেখ উদ্দিন নামে দুই সহোদর জানান, "পুরস্কারের আশায় ভিন্ন তিন দিনে তারা দুই ভাই মোট ২০টি টিকিট ক্রয় করেছেন। ড্র অনুষ্ঠিত হবে না শুনে তারা আক্ষেপ করে বলেন, প্রশাসন আগেই এই সিদ্ধান্ত নিলে আমরা হয়তো কম ক্ষতিগ্রস্ত হতাম। এখন কাকে বিচার দিব কে বিচার করবে প্রশ্ন রাখেন তারাও।"
এইদিকে সোমবার (১ লা মে) সকালের দিকে টিকিট বিক্রি করার সময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম রব্বানী সরদারের নির্দেশে পুলিশ তিনটি ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক আটক করে থানায় নিয়ে আসে। রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (দুপুর ১টা) সেগুলো থানায় আটক ছিল।
ড্র অনুষ্ঠিত হচ্ছে না বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর সোমবার সন্ধ্যায় জাতীয় রিক্সা ভ্যান শ্রমিক লীগ দেবীগঞ্জ উপজেলা শাখার অফিসে বিক্ষুব্ধ ক্রেতারা ভাঙ্গচুর চালানোর চেষ্টা করে। তবে অফিসের মূল ফটক বাইরে থেকে তালাবদ্ধ থাকায় ভেতরে কেউ প্রবেশ করতে পারেননি। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ফয়সাল জাবেদ নামে এক ক্রেতা অভিযোগ করেন, "শ্রমিক ইউনিয়নগুলো প্রায়ই সাধারণ ঘটনায় রাস্তায় ব্যারিকেড দেয়, মিছিল করে, গলাবাজি করে, গুন্ডামি করে। তাদের এমন আচরণে পুলিশ প্রশাসন অনেক সময় নিরুপায় হয়ে যায়। অথচ একটি ইউনিয়নের এমন ভাওতাবাজিতেও সাধারণ মানুষের পাশে নেই প্রশাসন।"
অভিযোগ আছে, লটারির জন্য জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের অনুমতি নেওয়া হয়েছে বলে প্রথম থেকেই আয়োজক কমিটি বলে আসছিলেন। তবে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে এই ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি।
দেবীগঞ্জ থানা পুলিশ সূত্র জানায়, আমরা তিন দিন লটারি বন্ধ রাখার এবং অনুমতি গ্রহণের বিষয়টি মৌখিক ভাবে আয়োজক কমিটিকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু তারা তা শুনেন নি। সর্বশেষ প্রশাসন তা বন্ধ করে দেয়। বাকী সিদ্ধান্ত প্রশাসনিক ভাবেই নেওয়া হবে।
অভিযোগ উঠেছে গত ৫ দিনে অন্তত ৪০ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। ড্র অনুষ্ঠিত না হলে এই পুরো টাকা আয়োজক কমিটি এবং লটারি পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের পকেটে যাবে।
জাতীয় রিক্সা ভ্যান শ্রমিক লীগ দেবীগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি- তায়াবুল ইসলাম বলেন, "আমরা ড্র এর ব্যাপারে আলোচনায় বসবো। আগামী শুক্রবার ড্র অনুষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে প্রাথমিক ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।"
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা -গোলাম ফেরদৌস জানান, "আগেই তাদের সাবধান করা হয়েছিল এবং টিকিট বিক্রি থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা শুনেননি। তাই গতকাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে র্যাফেল ড্র। ক্ষতিগ্রস্ত ক্রেতাদের মধ্য থেকে অভিযোগ পেলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।"
এস.এম/ডিএস