পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন রাসেল প্রধান নামে এক যুবক।
রাসেল প্রধান দেবীগঞ্জ উপজেলার দেবীডুবা ইউনিয়নের সোনাপোতা এলাকার বাসিন্দা। প্রথমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ২০২৩ সালে চারটি রিং স্লাব দিয়ে শুরু করেন সার উৎপাদন। ধীরে ধীরে সার উৎপাদনের পরিধি বাড়িয়েছেন। বাড়ির উঠানে টিনের সেড ও দোচালা পলিথিনের ঘরে ৩৭ টি রিংকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন করছেন। রাসেল প্রধান প্রতি মাসে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন করে আয় করেন প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা।
কৃষি উদ্যোক্তা রাসেল প্রধানের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিটি রিংয়ে ২-৩ মণ গোবর, শাকসবজির উচ্ছিষ্টাংশ ও কলাগাছের টুকরার মিশ্রণ করে প্রতিটি হাউজে ১০কেজি কেঁচো ছেড়ে দেয়া হয়। তারপর চটের বস্তা দিয়ে হাউজ ঢেকে রাখা হয়। এভাবে এক মাস ঢেকে রাখার পর তৈরি হয় ভার্মি কম্পোস্ট সার।
রাসেল প্রধান বলেন, "রিং স্লাব ও ঘর নির্মাণসহ মোট খরচ হয় প্রায় ৯ হাজার টাকা। পরে চাহিদা বেরে যাওয়ায় আরো ৫০ হাজার টাকা খরচ করে রিং স্ল্যাব তৈরি করেছি। এক মাসে উৎপাদন হয় ৩ টন কেঁচো সার। প্রতি কেজি সার ১২ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। পাশাপাশি প্রতি কেজি কেঁচো এক হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি করি। কেঁচো সার উৎপাদন করে নিজের চাহিদা পূরণ করি। বাড়তি কেঁচো এবং সার বিক্রি করে মাসে আয় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব হয়।"
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দিনাজপুর অঞ্চলে টেকসই কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দেবীগঞ্জ উপজেলায় ২০২৩-২০২৪ রবি মৌসুমে বেশ কিছু কৃষকদের ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে। প্রদর্শনীর আওতায় ঘর নির্মাণের জন্য টিন, খুঁটি, রিং এবং কেঁচো দেয়া হয়েছে। দেবীগঞ্জ উপজেলায় প্রায় দুই শতাধিক কৃষক ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন করছেন। এছাড়া ৬ থেকে ৭ জন কৃষক বানিজ্যিক ভাবে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন করছেন।
এদিকে রাসেল প্রধানের উৎপাদিত কেঁচো সার স্থানীয় কৃষকদের কাছে দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে চাষিরা এসে রাসেল প্রধানের বাড়ি থেকে সার কিনে নিয়ে চাষাবাদ করছেন। দেবীডুবা ইউনিয়নের সোনাপোতা এলাকার কৃষক মোঃ মাহাবুব আলম জানান, "রাসেল প্রধানের ভার্মি কম্পোস্ট সার ফসলে ব্যবহার করে ভালো ফলন পেয়েছি। আমার মতো অনেকেই এখন চাষাবাদে ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহার করছেন। এতে রাসায়নিক সারের তুলনায় খরচ কম, উৎপাদন বেশি হয়।"
ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদনের বিষয়ে দেবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নাঈম মোর্শেদ বলেন, "পরিবেশবান্ধব ভার্মি কম্পোস্ট সার মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা ও মাটির উর্বরতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমেছে। ভার্মি কম্পোস্ট সারের উৎপাদন বাড়াতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কৃষি উদ্যোক্তাদের সার্বিক সহযোগিতা ও দিক নির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে।"
এস.এম/ ডিএস