বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতা। দীর্ঘ নয় মাসের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতার সূর্য উঠেছিল এদেশে। মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ বিসর্জন দেওয়া সেইসব শহীদদের স্মৃতি চির জাগরুক রাখতে ১৭৮ কোটি ৯৮ লক্ষ টাকা ব্যায়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে তৈরি করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ ও জাদুঘর।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ পৌরসভার বাবু পাড়া সংলগ্ন সরকারি খাস জমিতে প্রায় ২৭ লাখ টাকা ব্যায়ে নির্মাণ করা হয় দেবীগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ। প্রশাসনের নজরদারি এবং যত্নের অভাবে তা পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগারে।
[caption id="attachment_9740" align="alignleft" width="360"] বিজ্ঞাপন [/caption]
প্রশাসনের নিয়মিত নজরদারি না থাকায় রাতের আঁধারে দেবীগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ হয়ে উঠে মাদক সেবীদের অভয়াশ্রম। এছাড়া দিনের বেলায় সেখানে কাপড় ও খড়ি শুকাতে দেওয়া হয়। স্মৃতি স্তম্ভের চারদিকে ফেলা হয় বাসা বাড়ির এবং পাট প্রক্রিয়াজাত কারখানার ময়লা আবর্জনা। এতে করে দেবীগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। এছাড়া ইতিমধ্যে নষ্ট হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভের বিভিন্ন অংশ ।
[caption id="attachment_9743" align="aligncenter" width="350"] ময়লার ভাগারে পরিণত হয়েছে দেবীগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ [/caption]
এ বিষয়ে জানতে চাইলে, দেবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক চিশতি বলেন, "মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভটি ওই জায়গায় কিভাবে নির্ধারিত হয়েছে আমি জানিনা। তবে যেহেতু স্থাপনাটিকে লিখিতভাবে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ মর্যাদা দেয়া হয়েছে সেহেতু সেটির যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা উচিত। আমরা অতি দ্রুত স্মৃতিস্তম্ভটি সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করার পদক্ষেপ নিবো।"
দেবীগঞ্জের যে স্থানটিতে মুক্তিযুদ্ধের কোন স্মৃতি নেই সেই স্থানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযুদ্ধের ৬ নং সেক্টর এর অধীনে যুদ্ধ করা কম্পানি কমান্ডার এ.কে ভুঁইয়া জানান, "মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভটি এখানে কিভাবে কার পরামর্শে করা হলো আমি জানি না। এখন যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভটি করা হয়েছে সেহেতু এটির যথাযথ মর্যাদা দেয়া উচিত। এখানে ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিনত হয়ে থাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ক্ষুন্ন হচ্ছে।"
জাতীয় বিভিন্ন দিবস সমূহ বিশেষত, স্বাধীনতা দিবস এবং বিজয় দিবসেও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা হয় না দেবীগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ, দেওয়া হয় না কোন ধরনের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
দেবীগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভের এই বেহাল দশা নিয়ে দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ গোলাম ফেরদৌসের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, "এটি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দায়িত্বে থাকার কথা। এছাড়া স্মৃতিস্তম্ভটির বিষয়ে আমি খুব বেশি অবগত নই। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যত দ্রুত সম্ভব মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভটি সংস্কার করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্ৰহণ করা হবে।"
এলাকাবাসী ও মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি মুক্তিযুদ্ধের এই স্মৃতিস্তম্ভটির দ্রুত সংস্কার ও রক্ষনাবেক্ষনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
এস.এম/ডিএস