পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে তাপদাহের কারনে মরিচ উৎপাদন কিছুটা কমে যাওয়ায় পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে কাঁচা মরিচের। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৭৮ থেকে ৮০টাকায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, উৎপাদন কমে যাওয়া ও বাড়তি চাহিদার কারণে দাম বেড়েছে কাঁচা মরিচের।
গতকাল শনিবার (৪ মে) সরেজমিনে দেবীগঞ্জ পৌরসদরের মরিচের পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, পাইকারী ক্রেতারা কৃষকদের কাছে থেকে মরিচ কিনে বেশ কয়েকটি স্থানে জমা করে রেখেছেন। সপ্তাহে দুই দিন বসে মরিচের এই হাট। হাটের দিন প্রায় ২০ থেকে ৩০ টন কাঁচা মরিচ কেনা বেচা হয়। তবে, এদিন অন্যান্য সপ্তাহের তুলনায় মরিচের জোগান কিছুটা কম ছিলো।
ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দুই সপ্তাহ আগে বাজারে মরিচের জোগান স্বাভাবিক ছিলো। সেসময় কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় কিনেছেন ব্যবসায়ীরা। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা তীব্র তাপদাহের কারনে মরিচের গাছ মরে যাওয়ায় এবং উৎপাদন কম হওয়ায় গত দুই সপ্তাহ থেকে কাঁচা মরিচের জোগান কমে গেছে, এতে করে চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে দামও বেড়েছে। এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৭৮ থেকে ৮০ টাকা দরে। যা গত সপ্তাহের তুলনায় কেজি প্রতি ২৮ থেকে ৩০ টাকা বেশি ।
আলমগীর হোসেন নামে এক মরিচ ব্যবসায়ী বলেন, আমি প্রতি হাটে পাঁচ থেকে সাত টন কাঁচা মরিচ কিনে দেবীগঞ্জ থেকে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাই। গত কয়েক সপ্তাহ থেকে হাটে তুলনামূলক মরিচ কম আসছে তাই মরিচের দাম বাড়তি। সামনে মরিচের দাম আরো বাড়তে পারে।
মোঃ ঈশা নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে মরিচের জোগান কিছুটা কম। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি মরিচ কিনেছিলাম ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় আর এই সপ্তাহে কিনতে হচ্ছে ৭৮ থেকে ৮০ টাকায়। এরকম ভাবে জোগান কমতে থাকলে মরিচের দাম আরো বাড়বে।
এদিকে পাইকারি বাজারে কাঁচা মরিচের দাম বেশি হওয়ায় খুশি কৃষকেরা। দেবীগঞ্জ বাজারে কাঁচা মরিচ বিক্রি করতে আসা টেপ্রীগঞ্জ ইউনিয়নের বানেশ্বর পাড়া এলাকার কৃষক আব্দুস সামাদ তালুকদার বলেন, “এবছর এক বিঘা জমিতে মরিচ লাগিয়েছি। এর আগে তিন বার মরিচ বিক্রি করেছি। প্রথমবার ১৫ থেকে ২০ টাকা এবং দ্বিতীয়বারে ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। এই দামে বিক্রি করে খুব একটা লাভ হতো না। তবে আজকে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। এতে করে গত কয়েকবারের তুলনায় কিছুটা লাভ হয়েছে।”
দেবীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চর তিস্তা পাড়া এলাকার বদিউজ্জামান নামে আরেক প্রান্তিক কৃষক জানায়, “১০ শতক জমিতে মরিচের আবাদ করেছি। প্রচন্ড রোদের কারনে গাছ মরে যাচ্ছে, বেশি বেশি সেচ দিতে হচ্ছে। ইদানিং মরিচের ফলনও কমেছে। প্রথমে দাম কম থাকলেও ফলন বেশি ছিলো। আর এখন ফলন কমে গেছে কিন্তু দাম বেড়েছে। এরকম দাম শেষপর্যন্ত থাকলে আশা করছি লাভবান হবো।”
উল্লেখ্য, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ২০২৪ সালের খরিপ মৌসুমে দেবীগঞ্জ উপজেলায় ১৫০ হেক্টর জমিতে এবার মরিচের আবাদ হয়েছে ।
এস.এম/ডিএস
মন্তব্য করুন