মহালয়া উপলক্ষ্যে ধর্মীয় উৎসবে যাওয়ার আনন্দে বিভোর ছিল তিন বছরের দীপু। এ জন্য সকাল থেকে নতুন কাপড় পরে প্রস্তুত হয়ে ছিল সে। দুপুর গড়ালে বাবা-মায়ের সঙ্গে সেও আউলিয়া ঘাটে এসে পৌঁছায়। গন্তব্য ঘাটের অপরপ্রান্তে বদেশ্বরী মন্দির। কিন্তু মন্দিরে পৌঁছার আগেই ঘাট থেকে ছেড়ে আসা তাদের বহনকারী নৌকা ডুবে যায় করতোয়ায়।
সাম্প্রতিক সময়ের ভয়াবহ এই নৌ-দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হাত থেকে দীপু অলৌকিকভাবে ফিরে আসতে পারলেও প্রাণ হারিয়েছেন তার মা রুপালি রানী। বাবা ভূপেন্দ্রনাথের মরদেহ এখনও খুঁজে পাননি উদ্ধারকর্মীরা।
প্রতিমা বিসর্জনের আগেই ৭১ সনাতনীর দেহ ভাসলো করতোয়ায়
স্বাভাবিকভাবে সেদিনের সেই ভয়াবহ স্মৃতি হয়তো মুছে যাবে ছোট্ট দীপুর মানসপট থেকে। সে শুধু জানে বাবা মন্দিরে গেছে পূজা দিতে, ফিরে আসবে একটু পরেই।
দীপু পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার হাতিডুবা গ্রামের বাসিন্দা। অন্যের জমিতে বাস করে তার পরিবার। ২ ভাই আর বৃদ্ধ দাদা-দাদিসহ ৭ সদস্যের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন ভূপেন্দ্রনাথ রায়। পুরো পরিবার আগলে রাখতেন মা রুপালি রানী। দুজনকে হারিয়ে অনিশ্চয়তায় দীপুর পরিবার।
দীপুর বড় ভাই দীপন রায় (১৭) এসএসসি পরীক্ষার্থী এবং আর এক ভাই পরিতোষ (১৩) সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। বাবা-মাকে একসাথে হারিয়ে তারাও নির্বাক।
যেভাবে বেঁচে ফিরল দীপু
সেদিন করতোয়ায় নৌকাডুবির সময় দীপু বাবা-মায়ের সাথে ডুবে যাওয়া ঐ নৌকাতেই উঠেছিল। কিন্তু মাঝ নদীতে নৌকাটি ডুবে গেলে পারে থাকা তাদের প্রতিবেশি সৌরভ ঘাটে থাকা একটি ছোট ডিঙি নৌকা নিয়ে পানিতে নেমে পড়ে। ঘটনাস্থলে পৌছানোর পর সৌরভ দীপুকে স্রোতের সাথে ভাসতে দেখে।
পরে তাকে অচেতন অবস্থায় নৌকায় তুলে পাড়ে নিয়ে আসে। তৎক্ষনাৎ স্থানীয়দের সহায়তায় দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও জ্ঞান না ফেরায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুরে পাঠানো হয়।
আর.ডিবিএস