উসামানীয় সাম্রাজ্যের শাসক বাগদাদ বিজেতা সুলতান চতুর্থ মুরাদ হযরত আলীর (রা.) মতো প্রজাদের খোজখবর নেওয়ার জন্য প্রায়শই ছদ্দবেশে বাজারে বের হতেন। এমনি এক রাতে তিনি তার নিরাপত্তা প্রহরীকে নিয়ে ছদ্দবেশে বের হলেন। এসময় তিনি তিনি দেখলেন ইস্তাম্বুলের রাস্তায় এক লোক পড়ে আছে। তিনি ঐ লোকের কাছে গিয়ে দেখলেন লোকটি মারা গিয়েছে। কিন্তু কেউ তাকে তার বাড়িতে পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছে না। তাই সুলতান আশেপাশের লোকদের ডাকলেন। তারা সবাই আসল কিন্তু কেউ সুলতানকে চিনতে পারল না। তিনি সবার উদ্দ্যেশ্যে বললেন, এই ব্যক্তি এখানে মৃত অবস্থায় পড়ে আছে কেন? আর আপনারাই বা একে উঠিয়ে নিচ্ছেন না কেন? এই ব্যক্তির পরিচয় কি? তার পরিবার কোথায়? উত্তরে লোকজন বলল, এই লোকটি যিন্দিক, মদখোর, ব্যভিচারী!
তখন সুলতান মুরাদ বললেন, আরে এ কি আল্লাহর বান্দা নয় ? এই ব্যক্তি কি মুহাম্মদ সা. এর উম্মত নয়? আসুন আমরা তাকে তার বাসায় নিয়ে যাই।” এরপর লোকজন মিলে মৃত লোকটিকে তার বাসায় পৌছে দেওয়া হলো।
বিজ্ঞাপন
স্বামীর নিথর লাশ দেখতেই স্ত্রী কান্নায় ভেঙে পড়ল। বিলাপ করতে লাগল আর বলতে থাকল, আল্লাহ তোমার উপর রহম করুক হে আল্লাহর ওলি! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, সত্যিই তুমি একজন সৎকর্মী! সুলতান বিলাপকারিনী মহিলার এই কথাটি শুনছিলেন আর যারপরনাই আশ্চর্যান্বিত হচ্ছিলেন!
কিছুক্ষন পর লোকজন চলে গেলে সুলতান নিজের আশ্চর্যের গোলকধাঁধা থেকে বের হওয়ার জন্য মহিলাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার স্বামী কিভাবে আল্লাহর ওলি হয়, অথচ লোকেরা বলল যে, সে একজন যিন্দিক, মদখোর, ব্যভিচারী?! শুধু তাই নয়, লোকেরা আপনার স্বামীর লাশকে ছুঁইতেও চাচ্ছেনা?!
তখন ওই লোকটির স্ত্রী বলল, আমিও মানুষের মতো এই একই বিষয়ে একমত। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। প্রকৃত বিষয় হলো আমার স্বামী প্রতি রাতে মদের দোকানে যেত। পকেটে যত টাকা থাকত, তা দিয়ে মদ কিনে আনত। ঘরে এনে মদগুলো নর্দমায় ফেলে দিত। আর বলত, দেখ কিছু মুসলমানের গোনাহের বোঝা তো কমাতে পেরেছি।
বিজ্ঞাপন
একইভাবে তিনি প্রতি রাতে সরাইখানায় গিয়ে একটি পতিতা নিয়ে আসত। আর ওই পতিতাকে এক রাতের উপার্জন দিয়ে কক্ষে বিশ্রামে রাখত আর ফজরের আজানের পর তাকে কুরআন তেলোয়াত করে শোনাতো। আর বলত, আল্লাহর শোকরিয়া, আজ এই মেয়েটির এবং একজন মুসলমান যুবকের পাপের বোঝা কিছুটা হালকা করতে পারলাম।
আর মানুষ তাকে এসব জায়গায় যাতায়াত করতে দেখে বড়ই পাপী মনে করত। আমিও তাকে বলতাম, মনে রেখ, যেদিন তুমি মরবে, সেদিন কেউ তোমাকে গোসল দেবে না, তোমার জানাজা পড়বেনা আর তোমাকে দাফনও করাবেনা। কিন্তু সে মুচকি হেসে বলত, চিন্তা কর না। তুমি দেখবে, আমার জানাজা যুগের বাদশা, রাষ্ট্রের সম্মানিত ব্যাক্তিবর্গ আর ওলামায়ে কেরামগণ পড়বে।
ঘটনা শুনে সুলতান মুরাদ দুই চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলে, নিশ্চয়ই আল্লাহ উত্তম পরিকল্পনাকারী। আমিই সুলতান মুরাদ খান, উসমানীয় সাম্রাজ্যের বাদশাহ। কাল আমিই নিজ হাতে তোমার স্বামীকে গোসল দেব। আমিই এর জানাজা পড়াব। এর দাফন কার্যও আমি সমাধা করব। সত্যিই পরদিন এই লোকের জানাজা হয়েছিল উসমানীয় সাম্রাজ্যের রাজদরবারে সুলতান মুরাদের রাজকীয় মসজিদের মাঠে। এতে শরিক হয় বিখ্যাত ওলামায়ে কেরাম এবং যুগের আউলিয়ায়ে কেরামগণ। সঙ্গে ছিলেন অসংখ্য সাধারণ জনতা।
শিক্ষা : এমনই ছিল মুসলিম শাসক এবং শাসিত। তাদের মধ্যে একমাত্র আল্লাহভীতি ছিল বলেই তাদের সোনালি ইতিহাস মানুষকে আজও অনুপ্রাণিত করে। আল্লাহ, আমাদেরও এমন সৌভাগ্য দান করুন।
আর/ডিবিএস