তপন কুমার রায়ের অকাল মৃত্যু মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটিতে ঠিক যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত। পুত্রকে হারিয়ে পিতা মনোরঞ্জন যেন পাগলপ্রায়!
জীবন সংগ্রামে লড়াই করে চার পুত্রের সবাইকে কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করে যখন সুখের ছোয়া পেতে যাচ্ছিলেন মনোরঞ্জন বাবু ঠিক তখনই মরণব্যাধি ক্যান্সার তাঁর পুত্রকে কেড়ে নিয়ে যেন, ঝড়ের মতোই তছনছ করে দিলো তাঁর সংসার! মনোরঞ্জন বাবুর স্ত্রী মেনকা রানীর মৃত্যুর পর তাঁর জীবন সংগ্রামের একমাত্র সহযোদ্ধা ছিলেন বড় ছেলে তপন। তপন তার ৩ ছোটভাই ও বোনকে প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব কর্তব্যে দৃঢ়প্রত্যয়ী। ছোটবেলায় মাকে হারানোর পর জীবনের সমস্ত স্বপ্ন, চাওয়া পাওয়া কে বিসর্জন দিয়ে সংসারের হাল ধরেছেন অবলীলায়। চার ভাই বোন কে প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিজের জীবনের সমস্ত কিছুর বিনিময়ে। এক ভাই প্রফেসর জয়দেব রায় পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজে কর্মরত একভাই বরুণ কুমার রায় এবং একমাত্র বোন শেফলী রাণী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত। সবচেয়ে ছোট ভাই কে প্রতিষ্ঠত করেছেন তার জীবনের কাঙ্খিত জায়গায়। তিনি ভাই কে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন ভাই বড় হয়ে ডাক্তার হয়ে সমাজের গরীব দুঃখী ও মেহনতী মানুষের সেবা করে যাবে। তাঁর স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। ছোটভাই ডাঃ নরদেব রায় এখন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সুনামধন্য ডাক্তার।
ধর্মীয় ও সামাজিকতায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গেছেন। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালনের জন্য গ্রামের মানুষদের সহযোগিতায় তিনি প্রতিষ্ঠিত করেছেন শ্রী শ্রী গৌড়ীয় মন্দির। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে পালন করেছেন সভাপতির দায়িত্ব । সমাজ সেবায় তপন কুমার রায় ছিলেন উদার মনের মানুষ । তাঁর সমাজ সেবার প্রতিদান হিসেবে ৫নং সুন্দরদীঘি ইউনিয়ন বাসী তাকে ইউনিয়ন ফেডারেশন (RDRS) চেয়ারম্যান নির্বাচিত করে।
ফেডারেশন চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সমাজ সেবামুলক করে গেছেন। সমাজিক, রাজনৈতিক এবং সেবামুলক কাজ করতে গিয়ে তাকে অনেক সময় সহ্য করতে হয়েছিল সীমাহীন বাধা এবং লাঞ্ছনা।
সকল বাঁধা- বিপত্তি, লাঞ্ছনা কে পেছনে ফেলে ছুটে চলছেন সামনের দিকে। সমাজের কিছু মানুষের সমালোচনা হজম করছেন নীলকন্ঠের ন্যায়।পরিবার, সমাজের জন্য তার এই অকাল প্রয়ান অপূরনীয় ক্ষতি!
ভাইয়ের প্রয়ানে শোকবিহ্বল ডাঃ নরদেব রায় বলেন, “দাদার মৃত্যু আমরা মানসিকভাবে চরম বিপর্যস্ত। এই নির্মম সত্য কে কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছি না! কিন্তু সত্য যে বরই কঠিন।
সবাই আমাদের জন্য প্রর্থনা করবেন যেন এই গভীর শোককে শক্তিতে পরিনত করে মানুষ ও সমাজের জন্য ভালো কিছু করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারি। আমার দাদা এবং বাবার স্বপ্ন কে বাস্তবে রূপ দিতে পারি”।
এস.এম/ডিএস
মন্তব্য করুন