স্বাধীনতা পরবর্তী পঞ্চগড়ে সব থেকে বড় বিপর্যয় ছিল গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মহালয়ার আনন্দ সেদিন নিমিষেই শোকে পরিণত হয়েছে নৌকাডুবিতে ৭২ জনের প্রাণহানির মধ্য দিয়ে। বিভীষিকাময় সেই দিনে স্বজন হারানোর বেদনা এখনো বয়ে চলেছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। নৌকাডুবির ঘটনা পুরো দেশকে নাড়া দেয়। এতগুলো মানুষের মৃত্যুতে শোক বিহ্বল হয়ে পড়ে দেশের মানুষ।
প্রশাসনের নজরদারি অভাব, ঘাটে পর্যাপ্ত নৌকা না থাকা আর অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সেদিন এতগুলো মানুষের জীবন কেড়ে নেয়। যারা বেঁচে ফিরেছেন তারা এখনো আঁতকে উঠেন সেদিনের স্মৃতি মনে করে। নৌকাডুবিতে নিহতদের মরদেহ মিলেছিল প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূর অবধি।
উত্তরের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিবছর দুর্গাপূজার আগে মহালয়ার দিন সনাতন ধর্মের হাজার-হাজার পুণ্যার্থীগণ করতোয়া নদীর আউলিয়া ঘাট হয়ে বদেশ্বরী মন্দিরে পূজা অর্চনার জন্য যান। সেদিনও পুণ্যার্থীগণ সে উদ্দেশ্যেই নৌকায় উঠেন।
এছাড়াও, বোদা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে বড়শশী, কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়ন করতোয়ার অপরপ্রান্তে। দুই ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষের উপজেলা শহরে যেতে করতোয়া নদী পার হতে হয়।
দীর্ঘদিন থেকে আউলিয়া ঘাটে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিল স্থানীয়রা। কিন্তু প্রতিবার আশ্বাস মিললেও সেতু নির্মাণে কোন অগ্রগতির দেখা মেলেনি। সর্বশেষ গত বছর ৭ অক্টোবর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সেতু ডিজাইন) মোহা. রেজাউল করিমের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের ওই ঘাট এলাকা পরিদর্শনে আসেন। এই সময় তারা সেতুর খসড়া লেআউট যাচাই করেন।
এর আগে গত বছর ২৯ সেপ্টেম্বর রেলমন্ত্রী ও পঞ্চগড়-২ (বোদা-দেবীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য নূরুল ইসলাম সুজন নৌকাডুবিতে নিহত পরিবারের মাঝে আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে জানিয়েছিলেন, “ডিসেম্বর বা জানুয়ারির শুরুতেই শুরু হবে সেতুর কাজ।”
এক বছরে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু না হওয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। ইউনিয়নের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব মুসা মিয়া বলেন, “হামার এমপি’ক ১৫ বছর ধরি কয়া আইসেছি ব্রীজের তানে। খালি হবে হবে কয়া গতবছর এতলা মাইনসি মারা গেইল। এইবারো যে কি হছে।”
একইভাবে আক্ষেপ করে আশির্ধ্বো বঙ্কেশ্বর রায় বলেন, “আর কতলা মাইনসে মইরলে একখান সেতু হবে ভগবানে জানে। হামার এমপি গতবার কইছে এই বছর ব্রীজের কাজ শুরু হবে। ওই আশাতে আছি এলা।”
পঞ্চগড় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দফতর সূত্র জানায়, পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় জেলার বোদা-ভাউলাগঞ্জ জিসি সড়কের আউলিয়ার ঘাটে প্রায় এক হাজার ১০০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৭ দশমিক ৩২ মিটার প্রস্থের ওয়াই আকৃতির সেতু নির্মাণের প্রস্তাব ইতোমধ্যে একনেকে পাশ হয়েছে। যার ডিজাইনও চূড়ান্ত হয়েছে।
পঞ্চগড়ের স্থানীয় প্রকৌশল দফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মাহমুদ জামান বলেন, “টেণ্ডার প্রক্রিয়া ও মন্ত্রণালয়ের মূল্যায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। চূড়ান্ত অনুমতি যে কোন সময় হতে পারে। আশা করছি মাস খানেকের মধ্যে আমরা ঠিকাদার চূড়ান্ত করতে পারবো।”
বোদা এবং দেবীগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবী আউলিয়ার ঘাটে দ্রুত সেতু নির্মাণ করা হোক। যেন আর কোন মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পার না হতে হয়। আর যেন কাউকে স্বামী-সন্তান হারা হতে না হয়।
এস.এম/ ডিএস
মন্তব্য করুন