দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পঞ্চগড়-২ আসনে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই ব্যানার-পোস্টার আর মাইকের প্রচারে ভোটের মাঠে সরব আওয়ামী লীগ। তুলনামূলকভাবে প্রচারণায় পিছিয়ে রয়েছে বিরোধী প্রার্থীরা।
গত বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) দেবীগঞ্জ উপজেলার চেংঠি হাজারাডঙ্গা ইউনিয়ন থেকে নির্বাচনী প্রচারণা ও পথসভা শুরু করেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও রেলমন্ত্রী মোঃ নূরুল ইসলাম সুজন । এছাড়া প্রতীক বরাদ্দের দিন থেকে তার পক্ষে দেবীগঞ্জ উপজেলায় প্রচার-প্রচারণা, মিছিল-মিটিং এবং মাইকিং করছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জাতীয় পার্টির মোঃ লুৎফর রহমান রিপন এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির আহমাদ রেজা ফারুকীর নির্বাচনী তৎপরতা বিশেষত পোস্টার কিংবা মাইকিং বের হতে দেখা যায় নি। কেবল সাধারণ মানুষের কাছে দোয়া চাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে দেখা গেছে এই দুই প্রার্থীকে। অন্যদিকে তৃনমুল বিএনপির মোঃ আব্দুল আজিজের কিছু জায়গায় পোস্টার দেখতে পাওয়া গেলেও মাইকিং বের হতে দেখা যায় নি।
এবিষয়ে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী মোঃ লুৎফর রহমান রিপন বলেন, “আসলে আমাদের প্রস্তুতি নিতে দেড়ি হয়ে গেছে। আগামীকাল থেকে পোস্টার, মাইকিং, পথসভা শুরু হয়ে যাবে। তবে ইউনিয়ন পর্যায়ে ইতিমধ্যে নেতাকর্মীরা কাজ শুরু করেছে।”
বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মনোনীত প্রার্থী আহমাদ রেজা ফারুকী বলেন, “আজ থেকে মাইকিং বের হয়েছে, আগামীকাল অথবা পরশু থেকে পোস্টারিং শুরু হবে। প্রচারণায় দেড়ি হওয়ার মূল কারন হলো আমাদের অফিসিয়াল ওয়ার্ডার পেতে দেড়ি হয়েছে।”
এদিকে তৃণমূল বিএনপির মোঃ আব্দুল আজিজ বলেন, “বোদা উপজেলায় পোস্টার লাগানো শেষের দিকে, দেবীগঞ্জ উপজেলাতেও পোস্টার লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে মাইকিং বের হয়েছে।”
ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ছাড়াও দেবীগঞ্জ উপজেলায় শক্ত অবস্থান রয়েছে বিএনপি ও জামায়াতের। বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করা এবং নতুন প্রার্থীরা আশানুরূপ ভাবে জণগণের কাছে পৌঁছাতে না পারায় ভোটের মাঠে একক দখল রয়েছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর।
দেবীগঞ্জ উপজেলার সোনাহার ইউনিয়নের রাসেল ইসলাম নামে এক ভোটার জানায়, “এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়া অন্য কারো পোস্টার, মাইকিং লক্ষ্য করি নাই। সুজন এমপি ছাড়া বাকী যারা ভোটে দাঁড়িয়েছে তাদের এর আগে এলাকায় দেখি নি কখনো। এবারের নির্বাচনে বিএনপি নেই তাই ভোটের আমেজও তেমন নেই।”
দেবীগঞ্জ পৌরসভার নতুন ভোটার বেলাল হোসেন জানায়, “এর আগের পৌরসভা, ইউনিয়ন ভোটে মানুষের যত বেশি উৎসাহ দেখতাম জাতীয় ভোটে সেই উৎসাহ দেখি না। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রচারণাই শুধু দেখছি। তবে, আমি এবার প্রথম ভোটার। তাই ইচ্ছা আছে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিব।”
এদিকে এবারের নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বড় চ্যালেঞ্জ।
এবিষয়ে দলটির উপজেলা সাধারণ সম্পাদক হাসনাৎ জামান চৌধুরী জর্জ বলেন, “আওয়ামী লীগের মূল সংগঠন এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ভোটারদের কেন্দ্রে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছেন। আমরা নারী ভোটার এবং বিভিন্ন সরকারি ভাতা ও সুবিধাভোগীদের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছি। বর্তমান সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড এবং আমাদের প্রার্থীর সকল ভালো গুনাবলী ও কর্মকান্ড সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে। আশা করছি জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে আসবে।”
অন্যদিকে নির্বাচনের মাঠে শেষ পর্যন্ত থাকার সিদ্ধান্ত জানিয়ে উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এ.কে ভুঁইয়া বলেন, “আমরা কেন্দ্রের নির্দেশনা মেনে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকবো। দলীয় প্রার্থীর হয়ে প্রচার প্রচারনা চালানো শুরু করেছি, আশা করছি জনগণ জাতীয় পার্টিকে ভোট দিবে।”
উল্লেখ্য, দেবীগঞ্জ ও বোদা উপজেলার সমন্বয়ে পঞ্চগড়-২ সংসদীয় আসন গঠিত। এ আসনে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯৫ হাজার ৭১০ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ৯৪ হাজার ২২৮ জন। এর মধ্যে বোদা উপজেলায় ১ লাখ ৯৪ হাজার ১১৭ জন এবং দেবীগঞ্জ উপজেলায় ১লাখ ৯৫ হাজার ৮২৪ জন। আগামী সংসদ নির্বাচনে এ আসনটিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, তৃনমুল বিএনপি এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মনোনীত প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এস.এম/ডিএস
মন্তব্য করুন