পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে রাত হলেই বাড়ে বনদস্যুদের দৌরাত্ম্য। এক বছর আগেও যেখানে বন বিভাগের গাছ তেমন কেউ কাটতো না। সেখানে বছর না ঘুরতেই বদলে গেছে দৃশ্য। সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গাছ কাটার দৃশ্য ও গাছ পরিবহন এখন নিত্য দিনের চিত্র। এমন পরিস্থিতিতেও নিশ্চুপ বন বিভাগ। জনবল সংকট ও নিরাপত্তা সংকটের কথা বলছে বন বিভাগ। ফলে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বনদস্যুরা।
দেবীগঞ্জ উপজেলায় বন বিভাগের আওতাধীন বটতলি ও সদর বিটের অন্তর্ভুক্ত গাজকাটি, খয়ের বাগান, চর ঢাকাইপাড়া, আদর্শ গ্রাম এলাকায় সম্প্রতি দেদারছে গাছ কাটার বিষয়টি সামনে এসেছে। এতে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে তেমনি উপকারভোগীরা তাদের ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ১৯৯৬ সালে সামাজিক বনায়নের অধীনে রোপণ করা গাছগুলো এই উপকারভোগীদের জমিতেই গত ২৭ বছর থেকে বেড়ে উঠেছে।
সরজমিন বটতলি বিটের আওতাধীন গাজকাটি এলাকায় গিয়ে গাছ কাটার সত্যতা মিলে। বিট অফিস থেকে কাছেই কিছু দূর পরপরই একাধিক কাটা গাছের গোড়া বনদস্যুদের দস্যুতার চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে।
সিরাতুল মোস্তাকিম নামে এক উপকারভোগী বলেন, “আমার জমির সার, পানি শোষণ করে বেড়ে উঠা গাছ রাতের বেলায় কেটে ফেলা হচ্ছে। প্রশাসনের নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। সেই অভিযোগ বন বিভাগে গিয়ে আটকে আছে। রবিবার দিবাগত রাতে আমার জমির আরো চারটি গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে। গত আড়াই মাসে মোট ৮টি গাছ কেটে নেওয়া হল। যার বাজারমূল্য প্রায় দেড় লাখ টাকা।”
সদর বিটের খয়ের বাগান এলাকার চিত্র আরো ভয়াবহ। সেখানে গত ছয় মাস ধরে দেদারছে রাতে গাছ কাটা হচ্ছে। অনেক জমির মালিক জানেনই না কে বা কারা তাদের জমির গাছ কেটে নিচ্ছে। শতকের পর শতক জমির প্রায় পাঁচ শতাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এর ফলে সাম্প্রতিক ঘটনায় বন বিভাগের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বন বিভাগ এইসব গাছ রক্ষা করতে না পারায় জেলা-উপজেলায় বন বিভাগ থাকার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
খোরশেদ আলম নামে আরেক জমি মালিক বলেন, “বন বিভাগ ব্যক্তি মালিকানা জমিতে উপকারভোগীদের নিয়ে যে গাছ লাগিয়েছিলো তার মেয়াদ ১২ বছর অথচ তারা গাছগুলো কাটতেছে না। অন্যদিকে উপকারভোগী হোক কিংবা বনবিভাগের কর্মকর্তাদের ইন্ধনে রাতের আঁধারে গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। আইনে বলা আছে জমির মালিক গাছের অর্ধেক লভ্যাংশ পাবেন অথচ রাতের গাছ কেটে নেয়ার ফলে জমির মালিক গাছগুলো পেলে না আবার সরকারও পেল না।”
এইদিকে গাছ কাটার পেছনে রাজনৈতিক মদদ রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। এই ঘটনায় বন বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জড়িত থাকার অভিযোগ যেমন উঠছে তেমনি রাজনৈতিক মদদপুষ্ট হওয়ায় বন বিভাগ এই অনিয়ম বন্ধে ভূমিকা রাখতে পারছে না বলে মনে করছেন অনেকে।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফুল আলম বলেন, “বন বিভাগের গাছ চুরি যাওয়ার বিষয়টি আমাদের অফিসিয়ালি কেউ জানায়নি। বন বিভাগ থানায় মামলা করতে পারে। যদি থানায় মামলা না নেয় সেই বিষয়টিও আমাদের জানাতে হবে। অফিসিয়ালি বিষয়গুলো অবগত হলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
দেবীগঞ্জ রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল কাদের বলেন, “আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। সাম্প্রতিক সময়ে আদালতে বেশ কিছু মামলাও করা হয়েছে। বটতলি বিটে অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও সদর বিটে গাছ চুরি কমানো যাচ্ছে না। আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বশিরুল-আল-মামুন বলেন, “গাছ চুরি অব্যাহত থাকলে এর দায় রেঞ্জ কার্যালয় এড়াতে পারে না। কারণ বন অপরাধ সংঘটিত হলে সেটার কারণ খুঁজে বের করা রেঞ্জ কর্মকর্তার দায়িত্ব। আমি বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখব।”
এস.এম/ডিএস
মন্তব্য করুন