শোলাকিয়ায় আজ (৩মে) সকাল ১০টায় ১৯৫তম ঈদুল ফিতরের জামাত শুরু হয় । বড়বাজার মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা শোয়াইব বিন আব্দুল রব এ জামাতে ইমামতি করেন। নামাজ শেষে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এবারের জামাতে প্রায় চার লাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করেছেন বলে ধারণা করছেন আয়োজন কমিটি।
সোমবার রাত থেকেই মুসল্লিরা বিভিন্ন জায়গা থেকেই শহরে প্রবেশ করতে থাকে। ভোরে কিশোরগঞ্জের রাস্তাঘাট মুখর হয়ে উঠে হাজারো মুসল্লির পদচারণয় । কেউ গাড়িতে চড়ে কেউবা পায়ে হেঁটে জামাতে অংশ নিতে আসেন। শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় সকাল ৯টা বাজে ওঠার আগেই। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে মুসল্লিরা মাঠে প্রবেশ করে জামাতে অংশ নেন।
শোলাকিয়ায়য দুই বছর পর জামাত হওয়ায়, আশপাশের রাস্তাগুলোতে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেছেন বহু মুসল্লি মাঠের ।
২০১৬ সালের জঙ্গি হামলার পর ঢেলে সাজানো হয় শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা । দুই বছর পর ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ায় এবার কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। র্যাব সদস্যরা দুটি ওয়াচ টাওয়ারে দায়িত্বপালন করেন স্নাইপিং রাইফেল নিয়ে। বাকি চারটি ওয়াচটাওয়ারে ছিল পুলিশের সদস্য। কড়া নজরদারির অংশ হিসেবে পুলিশের বেশ কয়েকটি ক্যামেরা ড্রোন আকাশে উড়ে। সিসি ক্যামরার নজরদারিতে ছিল পুরো মাঠ ও আশপাশের এলাকা।
পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, সব মিলিয়ে চার স্তরের নিরাপত্তা ছিল শোলাকিয়ায়। সকাল থেকেই পুরো মাঠ তল্লাশি করা হয়। শহরের যত অলিগলি আছে, সবখানে আমাদের নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়েছিল। পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র্যাব, আনসার সদস্যের সমন্বয়ে কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের পাশাপাশি মাঠে সাদা পোশাকে নজরদারি করে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। আমরা খুব সন্তুষ্ট এত বড় একটি জামাত নির্বিঘ্নে শেষ করতে পেরে।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও, জামাত শুরুর আগে শর্টগানের ৬টি ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়। জামাত শুরুর ৫ মিনিট আগে ৩টি, ৩ মিনিট আগে ২টি এবং ১ মিনিট আগে ১টি গুলি ছুঁড়ে নামাজ শুরুর সংকেত দেওয়া হয়।
ঈদের জামাতকে ঘিরে শহরের মোড়ে মোড়ে নির্মাণ করা হয় শুভেচ্ছা তোরণ। নানা রঙ-বেরঙের পতাকা ও ব্যানার টাঙানো হয় রাস্তার দুইপাশে। পৌর কর্তৃপক্ষ মুসল্লিদের সুবিধায় পুরো মাঠ ও আশপাশে খাবার পানির ব্যবস্থা রাখে । স্বাস্থ্যবিভাগের মেডিক্যাল টিমও মাঠে তৎপর ছিল। স্কাউট সদস্যরা স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করে । শোলাকিয়া এক্সপ্রেস নামে দুটি বিশেষ ট্রেন ভৈরব ও ময়মনসিংহ থেকে বিপুল সংখ্যক মুসল্লি নিয়ে সকালে কিশোরগঞ্জে আসে। সবকিছু মিলিয়ে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় মুখর ছিল গোটা শোলাকিয়া মাঠ।
আজকে লাখো লাখো মুসল্লিদের অংশগ্রহণে শোলাকিয়া মাঠ আবারো নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে, বলে জানান জেলা প্রশাসক ও শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শামীম আলম।
আরএইচ/দেস
মন্তব্য করুন