দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারে অচেনা আমির হামজার নাম আসাকে জাতীয় পুরস্কারসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ব্যর্থতা বলে স্বীকার করেছেন কমিটির আহ্বায়ক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
মন্ত্রী বলেন, দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা রয়েছে। এটি যেমন আমার ব্যক্তিগত ব্যর্থতা তেমনি কমিটিরও যৌথ ব্যর্থতা। তবে যারা ভুল তথ্য দিয়ে আমাদের বিভ্রান্ত করেছেন, তাদের অবশ্যই শাস্তি হবে।
বুধবার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনসংক্রান্ত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, দায়িত্ব তো দায়িত্বই। আমরা পার পেতে পারি না। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা রয়েছে। আমরা ভুল করলে ভুল সংশোধন করি। ভুল হতে পারে, মানুষ হিসেবে আমরা ভুলের ঊর্ধ্বে নই। তবে এ ব্যাপারে আমাদের আরও সতর্ক থাকা উচিত ছিল।
তিনি বলেন, কমিটির দায়িত্ব পালনে নিশ্চয়ই ভুলত্রুটি হয়েছে। নইলে এই ভুল হলো কেন?
আমির হামজাকে যারা স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য নির্বাচন করেছেন, তাদের কী শাস্তি হবে— এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, যারা ভুল তথ্য দিয়েছেন, তারাও এটির সঙ্গে জড়িত। তারা আমাদের বিভ্রান্ত করেছেন। যারা বিভ্রান্ত করেছেন, তাদের শাস্তি হবে। যেহেতু একটি কমিটি রয়েছে, সেহেতু কমিটিই বৈঠক করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।
রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারের (সাহিত্যে) জন্য মো. আমির হামজা নামে অচেনা এক ব্যক্তিকে মনোনীত করার পর বিতর্কের মুখে সেটি আবার বাতিল করে সরকার। আমির হামজাকে বাদ দিয়ে গত শুক্রবার সংশোধনী প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তালিকা প্রকাশ করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
গত ১৫ মার্চ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখায় ১০ ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানকে চলতি বছরে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত করে ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। তাতে সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করা হয় প্রয়াত আমির হামজাকে। অচেনা এই ব্যক্তিকে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মাননায় ভূষিত করায় অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেন।
বিতর্কের পর আমির হামজার লেখা ‘বাঘের থাবা’, ‘পৃথিবীর মানচিত্রে একটি মুজিব তুমি’ ও ‘একুশের পাঁচালি’ নামে তিনটি বইয়ের সন্ধান পাওয়া গেছে।
মরণোত্তর পদকপ্রাপ্ত সাহিত্যিক আমির হামজার বাড়ি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার বরিশাট গ্রামে। ওই গ্রামসহ সারা জেলার মানুষের কাছে তিনি পালাগানের শিল্পী কিংবা কবি হিসেবে পরিচিত।
তবে বরিশাট গ্রামে ১৯৭৮ সালে শাহাদত ফকির নামে একজন কৃষক এবং শিল্পী নামে আড়াই বছরের একটি শিশু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি। সর্বশেষ ২০০৭ সালেও স্থানীয় একটি গ্রাম্য মারামারির ঘটনায় তিনি আসামি ছিলেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
এ ঘটনায় তারা দুই ভাইসহ মোট ৬ জনের কারাদণ্ড হয়। আট বছর জেল খাটার পর ৯১ সালের দিকে বিএনপি সরকার গঠন করলে মাগুরার মন্ত্রী মজিদুল হকের সহায়তায় বেরিয়ে আসেন তারা। ‘রাজনৈতিক বিবেচনায়’ সাধারণ ক্ষমা পান এই আমির হামজাও।
আমির হামজার ছেলে আসাদুজ্জামান সরকারি কর্মকর্তা। খুলনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে আছেন তিনি। এ বিষয়ে আসাদুজ্জামানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি যুগান্তরকে বলেন, তার বাবা যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ছিলেন ঘটনাটি সত্য।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০২০ সালেও সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে সেটি বাতিল করেছিল সরকার। ওই বছর অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা এসএম রইজ উদ্দিন আহম্মদকে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছিল। সে সময় এ ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
আর/ডিবিএস
মন্তব্য করুন